মাছ চাষ করে কোটিপতি মিরসরাইয়ের কামরুল

কামরুল হোসেনের মাছ চাষে সফলতার গল্প।কামরুল হোসেনের মাছ চাষে সফলতার গল্প।

২০০৩ সালে কথা। তখন তিনি লেখাপাড়ায় ব্যস্ত। তখনই মনস্থির করলেন পড়ালেখার পাশাপাশি কিছু একটা করতে হবে। তাই নিজেদের কিছু জমি বন্ধক দিয়ে বাড়ির কাছে একটি পুকুরে মাছচাষ শুরু করেন। সেই থেকে শুরু। আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। জমি বন্ধকের ৪০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে শুরু হয় তার পথচলা। কঠোর পরিশ্রম আর একাগ্রতা তাকে নিয়ে গেছে উন্নতির শিখরে। চট্টগ্রামের মৎস্য জোন হিসেবে খ্যাত মুহুরী প্রকল্প এলাকায় এখন শত শত মাছচাষির মডেল কামরুল হোসেন প্রকাশ কামরুল হুজুর। আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষের জন্য তিনি উপজেলার মাছচাষিদের কাছে মডেল। অনেকে তাকে অনুসরণ করে চাষ করছেন। নিয়মিত তার কাছ থেকে পরামর্শ নেন চাষিরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চোখের দৃষ্টি যতটুকু যায় শুধু প্রকল্প আর প্রকল্প। মুহুরী প্রজেক্ট এলাকায় অবস্থিত ‘ফারহা মৎস্য প্রকল্প’ নামে তার প্রকল্পে দেখভাল করছেন কামরুল। প্রকল্পে নিয়োজিত শ্রমিকদের (কর্মীদের) পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি।
কামরুল হোসেন বলেন, ২০০৩ সালে ছাত্র থাকা অবস্থায় আমাদের কিছু জায়গা বন্ধক দিয়ে ৪০ হাজার টাকা নেই। ৩০ হাজার টাকা দিয়ে পাঁচ বছরের জন্য একটি পুকুর ইজারা নেই। বারইয়ারহাটের একটি খাদ্যের দোকান থেকে বাকিতে খাদ্য নিয়ে মাছচাষ শুরু করি। প্রথম বছরে আড়াই লাখ টাকার মাছ বিক্রি করি। এর পর থেকে মাছ চাষের পরিধি বাড়াতে থাকি। বর্তমানে ৪০ একর জায়গায় আমার মৎস্য প্রকল্প রয়েছে। বর্তমানে আমার প্রকল্পে ১৫ জন কর্মচারী রয়েছেন। মাছচাষ আমার জীবনের একটি অংশ। নিজের কঠোর পরিশ্রম আর মানুষের দোয়ায় আমি সফল হয়েছি।
তিনি আরো বলেন, প্রতি তিন মাস পরপর প্রকল্প থেকে মাছ বিক্রি করি। চট্টগ্রাম শহর থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা এসে প্রকল্পের পাড় থেকে মাছ কিনে নিয়ে যান। বছরে প্রতি একরে প্রায় আট লাখ টাকার মাছ বিক্রি করি। যার মধ্যে খরচ পড়ে পাঁচ লাখ টাকা। এই হিসাবে বছরে আমার প্রকল্প থেকে প্রায় চার কোটি টাকার মাছ বিক্রি করি। তাতে আমার দেড় কোটি টাকার মতো লাভ থাকে।
কামরুল বলেন, এখানে অন্য মাছচাষিরা প্রতি একর থেকে বছরে ১৫-১৬ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করে থাকেন। আমি আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে প্রতি একর থেকে বছরে ২৫ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করি। আমার কিছু কৌশল অবলম্বন করে মাছচাষ করি
মাছচাষ করতে কী সমস্যা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, পানি নিষ্কাশন সমস্যা অন্যতম। বর্ষাকালে পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় প্রকল্প থেকে লাখ লাখ টাকার মাছ ভেসে যায়। যাতায়াতের সড়কটি চলাচলের অনুপোযোগী। জোরারগঞ্জ থেকে মুহুরী প্রজেক্ট এলাকা পর্যন্ত সড়কের বেহাল অবস্থা। এতে মাছের গাড়ি নিয়ে বাইরে যেতে অনেক সমস্যা হয়। সময়মতো আড়তে মাছ পৌঁছানো সম্ভব হয় না। এ ছাড়া ওই এলাকার আজমপুর বাজারে একটি প্রাইভেট ব্যাংকের শাখা প্রতিষ্ঠার দাবি জানান তিনি। কারণ মুহুরী প্রকল্প এলাকায় শত শত মাছচাষি রয়েছেন। বিভিন্ন ব্যাংকে যাদের কোটি কোটি টাকা লেনদেন করতে হয় বারইয়ারহাট কিংবা জোরারগঞ্জে গিয়ে । এতে মাছচাষিদের অনেক ঝুঁকি নিয়ে টাকা জমা দিতে হয়। মাঝে মধ্যে পাশের সোনাগাজী উপজেলার সন্ত্রাসীরা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে আমাদের ওপর হামলা করে তারা। গত বছরের আগস্টে চাঁদা না দেয়ায় আমার ওপর হামলা করে একদল সন্ত্রাসী।
জানা গেছে, মাছ চাষ করে সাবলম্বী হয়েছেন কামরুল হোসেন। কোটি টাকা খরচ করে বাড়ি করেছেন, একটি মাছের খাদ্যের দোকান দিয়েছেন। এ ছাড়া উপজেলার বাণিজ্যিককেন্দ্র বারইয়ারহাটে একটি লাইভ মৎস্য আড়ত প্রতিষ্ঠা করেছেন। আড়তে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ জীবিত রাখা হবে। যেখান থেকে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মাছ সরবরাহ করা হবে। সফল মাছচাষি কামরুল হোসেন উপজেলার ৫ নম্বর ওছমানপুর ইউনিয়নের বাঁশখালী গ্রামের মৃত আব্দুল মান্নানের ছেলে।
ইবাক (ইছাখালী, বাঁশখালী ও কোম্পানীনগর) সমবায় সমিতির সভাপতি এম এইচ লাভলু চৌধুরী বলেন, মাছ চাষ করে কামরুল এখন জিরো থেকে হিরো। তিনি কৌশলে মাছচাষ করে অন্য চাষিদের চেয়ে বেশি উৎপাদন করেন। তিনি নিয়মিত মাছের পরিচর্জা করেন। পানি ও মাটির গুণ বুঝে যখন যা দরকার তা করেন।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, কামরুল একজন সফল মাছচাষি। মুহুরী প্রজেক্ট এলাকায় শত শত মাছচাষিদের মধ্যে তিনি ব্যতিক্রম। মাছচাষে অনেক দক্ষ। মাছের গুণাগুণ বুঝে খাদ্য, ওষুধ দেন। এতে অন্যদের চেয়ে বেশি মাছ উৎপাদন করতে পারেন তিনি।

সুত্রঃ দৈনিক নয়াদিগন্ত, ৩০ জানুয়ারি ২০১৫

আপনার কৃষি সহায়তা আপনার এলাকাতেই।
কৃষি, মৎস্য চাষ, পোল্ট্রি, গবাদি পশু পালন, এবং পশু পাখির প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কিত যত তথ্য, জিজ্ঞাসা, কখন কোথায় কি হচ্ছে, কোন ঋতুতে কি ধরনের রোগের প্রাদুর্ভাব, কি কি ধরনের পূর্ব সতর্কতা নিতে হবে প্রভৃতি সকল বিষয়ে আমারা চেষ্টা করব আপনাদের জানাতে। আপনারাও পছন্দ মত বিষয়ে জানতে চাইতে পারেন। আমরা চেষ্টা করব স্থানীয় ভাবে বিশেষজ্ঞ সহায়তা প্রদান করতে।
আপনাদের একজনের অংশগ্রহণই হয়ত অন্যজনকে সাহায্য করবে কৃষি সফল খামারি হতে।
ধন্যবাদ