মাছ চাষের জন্য পুকুর প্রস্তুতি

ক্ষেতখামার - এর ছবি দরকার।ক্ষেতখামার - এর ছবি দরকার।

বানিজ্যিক ভাবে মাছ চাষের জন্য পুকুর কে প্রস্তুত করে নেওয়াই ভাল। কারন একটি পুকুর মাছ চাষের উপযুক্ত না হলে এবং পুকুর প্রস্তুত না করে চাষ শুরু করে দিলে বিনিয়োগ ব্যাপক ঝুঁকির মধ্য পড়বে। ঝুঁকি এড়াতে এবং লভ্যাংশ নিশ্চিত করতেই আমাদের চাষের জন্য পুকুর প্রস্তুত করে নিতে হবে।

মাছ চাষের জন্য পুকুর প্রস্তুতি
  1. পুকুরের পাড় ও তলা মেরামত করা।
  2. পাড়ের ঝোপ জংগল পরিষ্কার করা।
  3. জলজ আগাছা পরিষ্কার করা।
  4. রাক্ষুসে ও অবাঞ্ছিত মাছ দূর করা
    1. পুকুর শুকানো
    2. বার বার জাল টানা।
    3. ঔষধ প্রয়োগ
      1. রোটেনন। পরিমানঃ ২৫ – ৩০ গ্রাম/শতাংশ/ফুট। এর বিষক্রিয়ার মেদ ৭-১০দিন। প্রয়োগের সময় রোদ্রজ্জল দিনে।
      2. ফসটক্সিন / কুইফস / সেলফস ৩গ্রাম/শতাংশ/ফুট। মেয়াদ এবং সময় পুর্বের ন্যায়।
    4. চুনপ্রয়োগ ঃ- কারন / কাজ / উপকারিতা – সাধারনত ১কেজি চুন /শতাংশ প্রয়োগ করতে যদি PH এর মান ৭ এর আশেপাশে থাকে। বছরে সাধারনত ২বার চুন প্রয়োগ করতে হয়। একবার পুকুর প্রস্তুতির সময়, ২য় বার শিতের শুরুতে কার্তিক – অগ্রায়হন মাসে।
      1. চুন প্রয়োগের উপকারিতা
        1. পানি পরিষ্কার করা / ঘোলাটে ভাব দূর করা।
        2. PH নিয়ন্ত্রন করে।
        3. রোগ জিবানু ধংশ করে।
        4. মাছের রোগ প্রতিরধ ক্ষমতা বাড়ায়।
        5. বিষাক্ত গ্যাস দূর করে।
        6. শ্যাওলা নিয়ন্ত্রন করে।
      2. চুন প্রয়োগের সাবধানতা
        1. চুন কখনো প্লাস্টিকের কিছুতে গোলানো যাবে না।
        2. পুকুরে মাছ থাকা অবস্থায় চুন গোলানর ২ দিন পর পুকুরে দিতে হয়।
        3. গোলানর সময় এবং দেয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে হবে যেন নাকে মুখে ঢুকে না যায়।
        4. পানি নাড়া চাড়া করে দিতে হবে।
      3. সার প্রয়োগ ঃ- সার প্রয়োগ: প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক।
        1. জৈব সার/প্রাকৃতিক – যা কিনা প্রাণী কণা তৈরি করে। যেমন; গোবর, হাস মুরগীর বিষ্ঠা, কম্পোস্ট।
        2. অজৈব বা রাসায়নিক বা কৃত্রিম সার – যা উদ্ভিদ কণা তৈরি করে। যেমন, ইউরিয়া, টি.এস.পি.
মাছ চাষের জন্য পুকুর প্রস্তুতি – নতুন পুকুরে সার প্রয়োগ মাত্রা ঃ

নিচের যেকোন একটিঃ

  1. গোবর——————– ৫-৭ কেজি / শতাংশ অথবা
  2. হাস মুরগীর বিষ্ঠা ——— ৫-৬ কেজি / শতাংশ অথবা
  3. কম্পোস্ট—————– ১০-১২ কেজি / শতাংশ

এবং

  1. ইউরিয়া——————- ১০০-১৫০ গ্রাম / শতাংশ
  2. টি.এস.পি.—————- ৫০-৭৫ গ্রাম / শতাংশ
মাছ চাষের জন্য পুকুর প্রস্তুতি এর আনুমানিক মোট সময় ঃ
  • পাড় ও তলা + ঝোপ জঙ্গল পরিষ্কার = ২ দিন
  • রাক্ষুসে মাছ পরিষ্কার = ৩ (৭-১০ দিন পর্যন্ত বিষ ক্রিয়া থাকে)
  • চুন প্রয়োগ = ৩-৫ দিন।
  • সার প্রয়োগ = ৭ দিন

এরপর পোনা ছাড়া হবে। গড়ে মোট ১৭ দিন (২+৩+৫+৭)।

পুকুরে চাষযোগ্য মাছের বৈশিষ্ট্য ঃ
  • দ্রুত বর্ধনশীল
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি।
  • বাজার চাহিদা বেশি।
বানিজ্যিক ভাবে চাষযোগ্য মাছ ঃ
  • দেশী কার্পঃ রুই, কাতলা, মৃগেল, কালি বাউশ।
  • বিদেশী কার্পঃ গ্রাস কার্প, সিল্ভার কার্প, কার্পিও, মিরর কার্প, বিগ হেড।
  • কার্প ছাড়াওঃ পাঙ্গাস, তেলাপিয়া, সরপুটি/রাজপুটি, কৈ, চিংড়ি ইত্যাদি।
বিভিন্ন স্তরের মাছ একসাথে চাষের আনুপাতিক হার ঃ
উপরের স্তর ৪০%
মধ্য স্তর ২৫%
নিম্ন স্তর ২৫%
সর্ব স্তর ১০%
১০০%

সাধারনত শতাংশ প্রতি ১৫০ টি পোনা ছাড়া যায়। এ হিসাবে ৩০ শতাংশের একটি পুকুরে মোট ৪৫০০টি পোনা ছাড়া যাবে। এবং উপরের স্তরের মাছ থাকবে {(৪০X৪৫০০)/১০০}=১৮০০ টি পোনা

আপনার কৃষি সহায়তা আপনার এলাকাতেই।
কৃষি, মৎস্য চাষ, পোল্ট্রি, গবাদি পশু পালন, এবং পশু পাখির প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কিত যত তথ্য, জিজ্ঞাসা, কখন কোথায় কি হচ্ছে, কোন ঋতুতে কি ধরনের রোগের প্রাদুর্ভাব, কি কি ধরনের পূর্ব সতর্কতা নিতে হবে প্রভৃতি সকল বিষয়ে আমারা চেষ্টা করব আপনাদের জানাতে। আপনারাও পছন্দ মত বিষয়ে জানতে চাইতে পারেন। আমরা চেষ্টা করব স্থানীয় ভাবে বিশেষজ্ঞ সহায়তা প্রদান করতে।
আপনাদের একজনের অংশগ্রহণই হয়ত অন্যজনকে সাহায্য করবে কৃষি সফল খামারি হতে।
ধন্যবাদ