ভাঙছে পদ্মা কাঁদছে মানুষ !!

নদী ভাঙননদী ভাঙন

পদ্মাপাড়ের মানুষ কাঁদছেন আর বলছেন, ‘নদীর এ কূল ভাঙে ও কূল গড়ে এইতো নদীর খেলা। আমাগো কপাল প্রতি বছরই ভাঙে, আর গড়ে না।’ গতকাল দুপুরে রৌদ্রের তাপদাহে নিজের বসতভিটা থেকে নিজেদের থাকার ঘর ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার সময় অশ্রুসিক্ত ছল ছল চোখে এমনটাই জানালেন দোহার উপজেলার নয়াবাড়ি ইউনিয়নের বাহ্রা স্কুলের দক্ষিণ পাশে সর্বনাশী পদ্মার ভাঙ্গনে নিঃস্ব আবদুস সালাম। এ বছরও পদ্মায় পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন আতঙ্ক শুরু হয়েছে।
সরেজমিন দেখা যায়, দোহার উপজেলার নয়াবাড়ি ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের মধ্যে অরঙ্গাবাদ, পানকুন্ডু, ধোয়াইর, বাহ্রা পদ্মা ভাঙনে প্রায় নিশ্চিহ্ন। গত বছর উপজেলার নয়াবাড়ী ইউনিয়নের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ এবং বিলাশপুর ও সুতারপাড়া ইউনিয়নের একাধিক গ্রাম পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। পদ্মায় ভিটেমাটি হারানো পূর্ব ধোয়াইর গ্রামের বাসিন্দা ইমরান হোসেন জানান, এ বছরও প্রতিদিন পদ্মায় ভাঙনের ফলে পদ্মাপারের অসহায় পরিবারগুলো পাড়ি জমাচ্ছেন অনত্র্য। গত বছর স্থানীয় সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ সরকারের গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খান পদ্মায় ভাঙন রোধে বাঁধ দেয়াসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলেও বিগত সরকারের পাঁচ বছরের শাসনামলে তিনি তার অঙ্গিকার পূরণে ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, ‘এমনি করে সরকার আসে সরকার যায় কিন্তু আমাগো ভাগ্য বদলায় না ভাই’। ভাঙনের শিকার হয়ে বসতবাড়িসহ ভিটামাটি হারিয়ে নিঃস্ব পরিবারগুলোর অসহায় চেহারাগুলোর দিকে তাকালেই চোখে পানি এসে যায়। সেই সঙ্গে রাস্তাঘাট, মসজিদ, মন্দির, বিদ্যুৎসহ অন্যান্য অনেক মূল্যবান স্থাপনা পদ্মার পেটে হারিয়ে গেছে ও এখনও যাচ্ছে। পদ্মা ভাঙন রোধ না করায় প্রতিদিনই দোহারের মাত্রচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। বসতভিটা হারানো বৃদ্ধা জমিলা খাতুন বলেন ‘সবাই শুধু নির্বাচন আইলে পদ্মায় বাঁধ দিবার কতা কইয়া আমগো কাছে ভোট চায়। কিন্তু পাস করলি আর খবর লও না বাপ। তুমরা কাগজে লিখা আর কি করবা, আমগো ভাগ্য লিখনতো আর বদলাতি পারবা না।’
গত ১২/১৫ দিন যাবত পদ্মায় পানি বাড়ার ফলে বাহ্রা স্কুলের দক্ষিণ পাশ দিয়ে বেশ কিছু বাড়ি ঘর ভেঙে গেছে। আর সেখানে অবস্থানরত অনেকেই অন্যত্র সরে গেছেন। আবার কেউ কেউ কিছু দিনের মধ্যে ভাঙনের সম্ভাবনা থাকায় বসত ঘর ভেঙে অনত্র্য যাওয়ার জন্য প্রস্ততি নিচ্ছেন। তাই খোলা আকাশের নিচে প্রখর রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে চলছে তাদের মানবেতর জীবনযাপন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, গত দুই বছর যাবত উপজেলার এ অঞ্চলে ব্যাপকভাবে ভাঙন শুরু হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন সময় বিভিন্ন এমপি, মন্ত্রীরা পদ্মায় ভাঙনের শিকার এই অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে পদ্মা ভাঙ্গন রোধ করার জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। আর এ নিয়ে রয়েছে পদ্মাপাড়ের অসহায় মানুষের মনে নানা ক্ষোভ। বিগত সময় ক্ষমতাসীন দলের এমপি, মন্ত্রীরা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছিলেন, যেসব এলাকার লোক পদ্মার ভাঙনে বসতভিটা হারিয়ে আজ নিঃস্ব তাদের জন্য সরকারিভাবে আশ্রয়ণ প্রকল্প খোলা হবে এবং তাদেরকে স্থায়ীভাবে সরকারি জমি প্রদান করা হবে। কিন্তু প্রতিশ্রুতি শুধু প্রতিশ্রুতিই রয়ে গেছে। ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি পদ্মা ভাঙন কবলিত অসহায় মানুষের। পাশাপাশি পদ্মার ভাঙন রোধেও ব্যাপকভাবে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ফলে প্রতি বছরের মতো এ বছরও বর্ষা মওসুম শুরু হওয়ার আগেই পদ্মায় পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। এলাকাবাসী আরও অভিযোগ করে বলেন, এমনিতেই পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। তার ওপর আবার এখানে প্রতিদিন রাতে বড় বড় এক একটি তেলের জাহাজ এসে ভিড় জমায়। ফলে এই বড় বড় জাহাজের চাপে এবং পানির প্রবল ধাক্কায় পদ্মাপাড়ের অনেক অংশই ভেঙে পড়ছে। তারা বলেন, এ ব্যাপারে আমরা জাহাজ মালিকদের কিছুই বলতে পারি না। এলাকাবাসীর দাবি, অবিলম্বে এসব জাহাজ এই স্থানে যেন না নিয়ে আসে তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং বর্ষা মওসুমের শুরুতেই যেভাবে পদ্মার ভাঙন শুরু হয়েছে যদি দ্রুত এই ভাঙন রোধে পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হয় তবে দ্রুত নয়াবাড়ি ইউনিয়নসহ কুসুমহাটি ইউনিয়নের বিশাল অংশ বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
Courtesy: Manab Zamin

আপনার কৃষি সহায়তা আপনার এলাকাতেই।
কৃষি, মৎস্য চাষ, পোল্ট্রি, গবাদি পশু পালন, এবং পশু পাখির প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কিত যত তথ্য, জিজ্ঞাসা, কখন কোথায় কি হচ্ছে, কোন ঋতুতে কি ধরনের রোগের প্রাদুর্ভাব, কি কি ধরনের পূর্ব সতর্কতা নিতে হবে প্রভৃতি সকল বিষয়ে আমারা চেষ্টা করব আপনাদের জানাতে। আপনারাও পছন্দ মত বিষয়ে জানতে চাইতে পারেন। আমরা চেষ্টা করব স্থানীয় ভাবে বিশেষজ্ঞ সহায়তা প্রদান করতে।
আপনাদের একজনের অংশগ্রহণই হয়ত অন্যজনকে সাহায্য করবে কৃষি সফল খামারি হতে।
ধন্যবাদ